২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গরিব মারার’ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সেই সঙ্গে গরিববান্ধব, কর্মসংস্থানমুখী ও জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বামপন্থি এই দলটি।
সিপিবি বলছে, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার মরণঘাতী মহাবিপর্যয় মোকাবিলার অগ্রাধিকারমূলক কর্তব্যকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বিবৃতিতে প্রাথমিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম।
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবকে ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক, আমলাতান্ত্রিক আখ্যায়িত করে নেতারা বলেন, ‘করোনা মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের প্রাধান্য পাওয়া উচিত হলেও প্রকৃত অর্থে তা করা হয়নি। করোনা বিপর্যয় মোকাবিলার পাশাপাশি করোনার কারণে সৃষ্ট জনজীবনের সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্য নির্ধারণে এই বাজেট ব্যর্থ হয়েছে।
‘এই বাজেটে ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা-রুটি-রুজি-সহায়-সম্পদ লুটপাট করে মুষ্ঠিমেয় ১ শতাংশ লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বাজেটকে সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার গণবিরোধী দলিল আখ্যায়িত করে সিপিবির পক্ষে তা প্রত্যাখান করেন নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য্য প্রত্যক্ষ কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে। অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। করোনাকালে প্রদত্ত প্রণোদনার প্রায় পুরোটাই ধনিক শ্রেণির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সিংহভাগ বিত্তবানদের স্বার্থে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
নেতারা বলেন, ‘আগে ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও এবার সেটা ৬ শতাংশের বেশি হবে, যা উদ্বেগজনক। এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য নতুন করে অভ্যন্তরীণ খাত ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
‘প্রতিবছর যেমন অতীতের চেয়ে বাজেট ব্যয় সর্বোচ্চ হয়, তেমনি ঘাটতিও হয় সর্বোচ্চ। এবারও তাই হয়েছে। বাজেটের বেশির ভাগ খরচ হবে পূর্বের ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসন পরিচালনা ব্যয়, বিলাসদ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ।’